জাহিদুর রহমান পলাশ – ২১/০৮/২০২২
পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্য গণমানুষের এতদিন কার উপলব্ধির বাইরের কিছু না। তিনি একজন বিজ্ঞ কূটনৈতিক হওয়া সত্ত্বেও তোষামোদির জোয়ারে শেষ পর্যন্ত আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন নি। গোপনীয়তা রক্ষার চাতুর্য্যে তিনি বালখিল্যতার পরিচয় দিলেও একথা সর্বজন বিদিত যে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর সরকার ও রাজনীতিতে পরাশক্তিগুলো প্রভাব বিস্তার করে থাকে। বৈশ্বিক রাজনীতিতে ভারত ব্যাপক কোন পরাশক্তি না হলেও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতিতে পরাশক্তির ভূমিকায় অবতীর্ণ সেই ১৯৪৭ সাল থেকেই। বিগত ১৪ বছরের বাস্তবতায় দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতিতে যে মেরুকরণ তৈরি হয়েছে তা আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসেবে ভারতকে আরও শক্তিশালী করেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ছিল প্রধান চালিকাশক্তি।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে জনসম্পৃক্ততার ধারণাটা মোটামুটি এই শতাব্দীর শুরুর থেকেই নির্বাসিত। ১৯৯০ সালের আন্দোলনেও জনসম্পৃক্ততার যে জোয়ার ছিল, এমনকি ১৯৯৬ সালেও আওয়ামী লীগের তত্ত্বাবধায়ক আন্দোলনে যে জনসম্পৃক্ততা ছিল, ২০০৬ সালের সরকার বিরোধী আন্দোলনে জনগণের সেই সম্পৃক্ততা ছিল না। বাংলাদেশর রাজনীতিতে এই সময়টাতেই জনগণের জায়গাটা দখল করে নেয় আমলা ও ব্যূরুক্র্যাটতন্ত্র এবং এর শুরুটা ছিল ১৯৯৬ সালের সরকার বিরোধী জনতার মঞ্চে আমলাদের প্রথাবিরোধী যোগদানের মাধ্যমে।
আমলাতন্ত্রকে রাষ্ট্র পরিচালনার অনিবার্য শক্তিতে রূপান্তরের এই ধারাবাহিকতায় ২০০৬ সাল থেকে তারা দুর্দমনীয় শক্তিতে রাজনৈতিক সরকারের সমান্তরালে রাষ্ট্রযন্ত্রের চালিকাশক্তিতে পরিনত হয়। আমলাতন্ত্র যেখানে রাজনৈতিক সরকারের আনুকূল্য চালিত হওয়ার কথা, সেখানে রাজনৈতিক সরকার চালিত হচ্ছে আমলাতন্ত্রের আনুকূল্যে। নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের ভাগ্য নির্ধারণ হচ্ছে তাদের মাধ্যমে। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে রাষ্ট্র পরিচালনার কাঠামো যেখানে জনগণের নির্ধারণ করার কথা- রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি, ক্ষমতার লোভ, নির্লজ্জ অন্ধতা এবং অদূরদর্শিতায় রাষ্ট্র ও সরকার কাঠামোর প্রতি তারা সম্পূর্ণ উদাসীন।
গণতান্ত্রিক পরিবেশ যদি বজায় থাকতো, তবে শুধুমাত্র দুর্নীতি আর অপশাসনের জন্যই সরকার বিদায় নিতো। এর জন্য বিরোধী দলের বিশেষ কোন যোগ্যতার প্রয়োজন ছিল না।বর্তমান বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ যে আনুকূল্য জনগণকে দিতে পারে নাই, সরকার পরিবর্তনের মাধ্যমে সেই আনুকূল্য তারা অর্জন করবে এমন বিশ্বাস তারা রাখে না। এর পরেও জাতি হিসেবে আমরা পরিবর্তনের উপর আস্থাশীল। তাই আগামী দিনের রাজনীতিতে টিকে থাকার জন্য বিএনপির আস্থার সুযোগটা এখানেই।
আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতির প্রক্ষাপটে বর্তমান সরকার ভারতের যে আনুকূল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে, তাতে সমতা আনতে যে পর্যায়ের আন্তর্জাতিক সক্ষমতা দরকার, বর্তমান বিরোধী দল সেখানে অনেক পিছিয়ে। এ দেশের জনগণ এখন আর আন্দোলন মূখি না। শুধুমাত্র কর্মী নির্ভর আন্দোলন কখনো সফল হয় না। আন্দোলনে দুজন কর্মী নিহত হলে দেশব্যাপী দলীয় কর্মীদের মাঝে আসন্ন সরকার পরিবর্তনের স্বপ্নে যে উচ্ছ্বাস দেখা যায় তা অনেক ক্ষেত্রেই মানবিক বোধ সম্পন্ন আচরণ বলে মনে হয় না।